ভালোবাসার শীতল স্পর্শ মোহাম্মদ হাছান
এই গল্পের বর ইবরাহিম ও বধূটি জাহানারা। তাদের বিয়েটা কোনো প্রেমের বিবাহ নয়। তবে ইবরাহিম আমার বন্ধু ও সজ্জন। করোনার এই বেকার সময়ে চট্টগ্রামের ফাঁকা রেল স্টেশনে যাত্রী জিরানো পিলারের পাশে বসে সে তার প্রথম রাতের গল্পটি আমাকে বলেছিল।
সেই রাতে তারা দুজন চিরাচরিত সম্বোধন ও আলাপ শেষে একে অপরের হাত ধরে শুতে যায়। তখন ইবরাহিম জাহানারার পায়ের স্পর্শে খুব চমকে ওঠে। তার পা ছিল তখন প্রচণ্ড ঠাণ্ডা কারণ সে তো অনেক আগে থেকেই লেপ মুড়িয়ে শুয়ে আছে। জানুয়ারি মাসের ২য় সপ্তাহ ছিল তখন, বেশ কনকনে শীত বাহিরে।কিন্তু ঘরের ভিতরের পরিবেশ নাতিশীতোষ্ণ। তখন ইবরাহিম কথা বলা শুরু করল আবার – তোমার হাত-পা এতো ঠাণ্ডা কেন?
জাহানারাঃ জানি না। ইবরাহিম হেঁসে ওঠে হা হা, তাহলে একটি গল্প শুনো।জাহানারা- কি গল্প? রাত অনেক হয়েছে ! ইবরাহিম- এই শীতল স্পর্শ আমি এর আগেও পেয়েছিলাম। জাহানারা-কোথায়! কখন! কিভাবে? ইবরাহিম -বলছি। সময় নিয়ে শুনতে হবে। জা- ওকে বলেন। ইব- আরো কাছে আসো। তোমার হাত গুলো দাও।
জাহানারা তার আরো কাছে সরে আসলো আর সে বলতে শুরু করলো-
মা-বাবা ও আপু দুলাভাই সকলে মিলে আমার জন্য পাত্রী খুঁজতে ছিল। তখন আমি অক্সিজেন এ আবুল খায়ের কনডেন্সড মিল্কে জব করতেছি। গত ২ টি বছর আপু দুলাভাই আমার জন্য পাত্রী দেখে হয়রান। অনেক হুজুর কবিরাজ ও ধরেছেন আপু। যা হোক সেটা এক প্রকার দেখাদেখি চলছে। একরাতে আমি মেসে ঘুমুচ্ছিলাম হঠাৎ ঘুমের ঘোরে আমার ঠোঁটে – মুখে শীতল স্পর্শ পেয়ে জেগে ওঠলাম আমার পাশের বেডে সেদিন কেউ ছিল না। পাশের রুমে দুভাই থাকেন। সকাল বেলা ইকবাল ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম – গতরাতে কি আপনে আমার রুমে গেছিলেন? না, কেন? তারপর ওনাকে বিষয়টা বললাম যে আমার ঘুম হঠাৎ ভেঙে গেছে, মনে হয়েছে কেউ আসছিল রুমে। পরের দিন ছিল বৃহস্পতিবার, বাড়ি আসলাম। বিভিন্ন কথার এক পর্যায়ে মেঝ ভাবি ও বড় ভাবি জানতে চাইল – আপনে কি রাতে কিছু বুঝতে পারেন না? বিয়ের ফুল ফুটলে ঘুমের মধ্যে দেখা হয়! অনুভব করা যায়। আমি বললাম কই না তো! কেউ আসে না তো।
তারপর বেশ কিছুদিন পর, সেদিন বাহিরে টিপটিপ বৃষ্টি হচ্ছিল। যার ফলে ভ্যাপসা গরম লাগছিল রুমের মধ্যে। রাত এগারোটায় শুয়েছি ঘুমানোর জন্য কিন্তু ঘুম আসেনি। ফেইসবুক টুইটারে ঘুরাঘুরি করতেছি কখনো আবার হালের হট নায়িকাদের পেইজ ঘুরে আসতেছি। এই করতে করতে যখন রাত ২টা তখন মোবাইলে চার্জ শেষ হয়ে যায় আর আমিও ক্লান্তিতে চোখ বুঝে ফেলি। চোখ বুঝার ক্ষাণিক বাদেই আমি একটু একটু শীতল স্পর্শ অনুভব করি। কখনো আমার মুখে, কখনো কানে কখনো কপালে। সর্বশেষ স্পর্শটা অনুভব করলাম আমার পায়ে। আমি তখন কল্পনার জগতে ভাসছিলাম। কেউ একজনের আলতো স্পর্শে আমি হারিয়ে যাচ্ছি প্রেম সাগরে। এরই মাঝে হঠাৎ খট করে একটি শব্দ হলো এবং আমি জেগে গেলাম।জেগে দেখি আমার মশারি ঠিক নেই এবং মশা আমাকে খুবই কামড়াচ্ছে। এর মধ্যে মুয়াজ্জিন ফজরের আজান দিয়ে দিলেন মসজিদে। আমি দ্রুত ওঠে বসলাম এবং মোবাইল খুজতেছি কয়টা বাজে দেখার জন্য। প্রথমে বালিশের কাছে খুঁজলাম, তারপর মনে হলো মোবাইল তো পায়ের কাছে দিয়ে চার্জিং লাইনটায় চার্জ দিয়েছিলাম। ওখানে খুঁজে দেখি মোবাইল নেই। পাশেই জানালা পর্দা সরিয়ে দেখি জানালার পাল্লা গুলো খোলা। আমার আর বুঝতে বাকী রইল না, কী ঘটলো।
জাহানারা – হি হি এই আপনার গল্প!
ইবরাহিম- হুম! চোর চুরি করার জন্য এই কাজ করলেও আমি কিন্তু তোমার স্পর্শই সেটাকে ভাবতাম। তাই আল্লাহ আমাকে সেই শীতল স্পর্শটুকু আজ পাইয়ে দিয়েছেন।
লেখক
সহকারি শিক্ষক
No comments:
Post a Comment