Sunday, March 15, 2020

A CASE STUDY FOR PRIMARY TEACHERS




কেস স্টাডি

কেইস স্টাডিঃ কেইস স্টাডি হল একটি গবেষণা কৌশল । এটি একটি সমাজ গবেষণা ও অনুসন্ধানমূলক কৌশল যেখানে কোন ব্যক্তি,প্রতিষ্ঠান কে একক হিসাবে মনে করা হয়। যা ফলাফলের পিছনের গল্পকে অতি সুক্ষভাবে বিশ্লেষণ করে উপস্থাপন করে।
১ম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী অত্যন্ত মনোযোগী ও মেধাবী হওয়ার কারণ অনুসন্ধান।
উপস্থাপনায় মোহাম্মাদ হাছান

কেস স্টাডির জন্য বাছাইকৃত শিক্ষার্থীর ফটো
পুষ্পিতা চক্রবর্তী, ‍শ্রেণীঃ ১ম, রোলঃ ০২ তুলাবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়



কেস-স্টাডি অন্যান্য গবেষণার মতোই নিবিড় ও ধারাবাহিক অনুসন্ধান প্রক্রিয়া। শিক্ষকতা জীবনে একজন শিক্ষক শ্রেণি কক্ষে শিখন শেখানো কাজে বৈচিত্রময় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন।শিখন শেখানোর কাজে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর সমস্যা যেমন দূর করা যায়।পাশাপাশি শিক্ষক নিজ পেশার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব গড়ে উঠে এবং অনুচিন্তন প্রক্রিয়া সম্প্রসারিত হয় আর কাজটা কেস স্টাডির মাধ্যমে যথাযথ ভাবে সম্পাদন করা যায়।
ডিপিএড (২০১৯-২০২০) শিক্ষার্থী শিক্ষক হিসেবে আমি যখন তুলাবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণিতে অনুশীলন পাঠদানে একজন শিক্ষার্থীকে খুবই মনোযোগী ও মেধাবী হিসেবে চিহ্নিত করি। শিক্ষার্থীটির পরিচয় নিম্নরুপঃ
শিক্ষার্থীর নামঃ পুষ্পিতা চক্রবর্তী
রোল নংঃ ০২
শ্রেনিঃ ১ম(খ)
পিতার নামঃ সজল চক্রবর্তী  
মাতার নামঃ প্রিয়াংকা চক্রবর্ত্তী ।
গ্রাম/বাসাঃ তুলাবাড়িয়া ,  ফেণী
শ্রেণি শিক্ষকের নামঃ তাপষ কুমার নাথ
আমি শ্রেণিতে পাঠ দিতে গিয়ে দেখলাম পূজা চক্রবর্তী নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকে শ্রেণি পাঠে সে অত্যন্ত মনোযোগী  পূজা তার বাংলা বইয়ের ছড়া গুলো ছাড়াও  আরও বেশ কিছু ছড়া গান সাবলীল ভাবে অঙ্গভঙ্গি সহকারে আবৃত্তি ও গাইতে পারে  ১ম শ্রেনির একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি মনে করি সে একজন মেধাবী শিক্ষার্থী । ১ম শ্রেণি থেকেই একজন শিক্ষার্থীকে কিভাবে মনোযোগী ও মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে গড়ে তোলা যায় তার অনুসন্ধান করতে আমি এই কেস স্টাডি হাতে নিয়েছি বা পরিচালনা করবো ।
আশা করা যায় আমার এই কেস স্টাডি থেকে যে সকল নিয়ামক পাব তা পরবর্তীতে বিভিন্ন শিক্ষার্থীকে পাঠে মনোযোগী ও মেধাবী
হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।

                      

 গৃহীত কেস  স্টাডির  উদ্দেশ্য  নিম্নরূপ  
একজন শিক্ষার্থী কেন নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসবে তা শনাক্ত করা
  কোন কোন সুবিধা গুলো পেলে একজন শিক্ষার্থী ১ম শ্রেণি থেকেই পাঠে মনোযোগী হয়ে উঠবে এবং একজন শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীর মেধার বিকাশে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবো তা শনাক্ত করা
শিশুটির অভিভাবক ও শ্রেণী শিক্ষক এর নিকট থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ গ্রহন এবং তার ভবিষ্যৎ সাফল্য কামনা করা

আমি নিম্ন লিখিত ৪টি ধাপের মাধমে এই কেস স্টাডি পরিচালনা করি
  কেস স্টাডি পরিচালনার জন্য পরিকল্পনা প্রনয়ন
প্রশ্নপত্র চেকলিস্ট / সাক্ষাৎকার পত্রের মাধমে তথ্য সংগ্রহ
তথ্য শ্রেণি করণ ও বিশ্লেষণ
সিদ্ধান্ত গ্রহন
                                    ধাপ-১পরিকল্পনা প্রনয়ন
ক্রমিক
নং
 বিষয়   
পরামর্শক
কখন করা হবে
মন্তব্য
বিষয়বস্তু নির্ধারণ
ইন্সট্রাক্টর
২য় টার্মের ১ম সপ্তাহ

প্রশ্নপত্র/চেকলিস্ট / সাক্ষাৎকার পত্র প্রণয়ন।
ইন্সট্রাক্টর
২য় টার্মের ২য় সপ্তাহ

প্রশ্নপত্র চেকলিস্ট / সাক্ষাৎকার পত্রের মাধমে তথ্য সংগ্রহ ।
ইন্সট্রাক্টর
২য় টার্মের ৩য় সপ্তাহ

তথ্য শ্রেণীকরণ ও বিশ্লেষণ ।
ইন্সট্রাক্টর
২য় টার্মের ৪র্থ সপ্তাহ

প্রাপ্ত উপাত্তের আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহন।
ইন্সট্রাক্টর
৩য় টার্মের ১ম সপ্তাহ

কেস স্টাডি উপস্থাপন ।  
ইন্সট্রাক্টর
৪র্থ টার্মের ১ম সপ্তাহ

                                            ধাপ -
 তথ্য সংগ্রহের জন্য ২য় টার্মের ২য় সপ্তাহে টুলস হিসাবে আমি প্রশ্নপত্র ও নমুনা সাক্ষাতকারপত্র প্রণয়ন করি গাইড ইন্সট্রাক্টর এর পরামর্শ অনুযায়ী সংশোধিত প্রশ্নপত্রের আলোকে ৩ টি সাক্ষাৎকারপত্র রচনা করি যা তথ্য  সংগ্রহে ব্যবহার করেছি
                                      ধাপ-
২য় টার্মের ৩য় সপ্তাহে শিক্ষার্থী ,অভিভাবক, শ্রেণি শিক্ষক এর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছি সাক্ষাৎকার এর মাধমে যে সকল তথ্য পেয়েছি তা নিম্নরূপ
                            সাক্ষাৎকার পত্র - (শিক্ষার্থী )
                  শিক্ষার্থীর নামঃ পুষ্পিতা চক্রবর্তী
                        রোলঃ ০২ শ্রেণিঃ প্রথম

ক্রমিক নং
                              প্রশ্নমালা
হ্যাঁ
না
বর্ণনা করুণ
তোমার নাম কী?


পুষ্পিতা চক্রবর্তী
তুমি কি নিয়মিত বিদ্যালয়ে আস? ভালো লাগে আসতে?



পড়তে ভালো লাগে?কোন বিষয় পড়তে বেশি ভালো লাগে?


বাংলা
কোন শিক্ষককে ভালো লাগে?



কোন শিক্ষক কে কি খারাপ লাগে?



 তোমার প্রিয় বন্ধু কে?


পায়েল (১২)
ক্লাসে কি শিক্ষক কে প্রশ্ন করো সবসময়?



সন্ধ্যায় কতসময় পড়ালেখা করো ? 



মা কে কি কাজে সহযোগিতা করো বাড়িতে ?



                 সাক্ষাৎকার পত্র - (অভিভাবক)
অভিভাবকের নামঃ প্রিয়াংকা চক্রবর্তী
ঠিকানাঃ তুলাবাড়িয়া ,ফেনী সদর, ফেণী।

ক্রমিক নং
                              প্রশ্নমালা
হ্যাঁ
না
বর্ণনা করুণ
পুষ্পিতা কি নিয়মিত বিদ্যালয়ে যায়?



আপনার বাড়ি বিদ্যালয়ের কাছাকাছি কিনা?



আপনার মেয়ে বাড়িতে নিজে নিজে পড়তে বসে কিনা?



কোন গৃহ শিক্ষক আছে কি?



ও কি বাড়িতে অনেক প্রশ্ন করে ?



বাসায় কোন কাজে সহযোগিতা করে কিনা ?



বাড়িতে পড়াশোনার পরিবেশ ভালো কিনা ?



বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপরে আপনি সন্তুষ্ট কিনা ?



                                    সাক্ষাৎকার পত্র - (শ্রেণি শিক্ষক )
      শ্রেণি শিক্ষকের নামঃ                 শ্রী  তাপস কুমার নাথ                         পদবিঃ সহকারী শিক্ষক

 ক্রমিক নং
                              প্রশ্নমালা
হ্যাঁ
না
বর্ণনা করুণ
শ্রেনীকক্ষে শিখন শেখানো কাজে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করে কি?



বিদ্যালয়ে নিয়মিত উপস্থিত থাকে কি? 



ছড়া গান, কবিতায় পারদর্শী কি?



ক্লাশের নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলে কি?



সহপাঠীদের সাথে ভালো আচরণ করে কি? 



সর্বদা কি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পোশাক এ থাকে?



শিক্ষককে প্রশ্ন করে কিনা?



বাংলা ও ইংরেজি সাবলীলভাবে পড়তে পারে কি?



গণিতের দক্ষতা ভালো কিনা ?



১০
বাংলা ও ইংরেজি ভালো লিখে কি?



১১
দলীয় কাজে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে কিনা?



                 সাক্ষাৎকার পত্র - ( সহপাঠী )
         সহপাঠীর নামঃ পায়েল দাশ     শ্রেণিঃ প্রথম   রোল নংঃ ১২

ক্রমিক নং
                              প্রশ্নমালা
হ্যাঁ
না
বর্ণনা করুণ
তোমার বন্ধু কি নিয়মিত বিদ্যালয়ে যায়?



সে কি শ্রেনীতে মনোযোগী থাকে ?



সে কি তোমাকে পড়াশোনায় সহযোগিতা করে কিনা ?



ক্লাশে স্যারকে প্রশ্ন করে কিনা?



প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে কি সে?



তুমি তাকে পছন্দ কর কি ?



সে কি গান গাইতে পারে?



শিক্ষকদের কি সম্মান করে?



  
                                 তথ্য শ্রেণীকরণ ও বিশ্লেষণ

শিক্ষার্থীর শাক্ষাতকারঃ পুষ্পিতা চক্রবর্তী প্রাক প্রাথমিক শ্রেণী থেকে বিদ্যালয়ে আসতেছে। প্রাক প্রাথমিক এ নিয়মিত আসার ফলে সে অনেক গুলু ছড়া , গান রপ্ত করে ফেলেছে। সাবলীল পাঠক হিসেবে সে বাংলা ও ইংরেজি বিষয় পাঠ করে। শিখন শেখানো কারযক্রমেও সে সক্রিয় ভাবে অংশ নেয়।

অভিভাবক এর সাক্ষাতকারঃ দরিদ্র দম্পতির বড় সন্তান পুষ্পিতা । তার অভিভাবক সঠিক সময়ে তার বিদ্যালয়ে ভর্তি ও উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন। কোন গৃহ শিক্ষক না রেখে প্রিয়াংকা চক্রবর্তী নিজেই মেয়ের পড়াশোনার দেখাশোনা করেন।
শ্রেণি শিক্ষকের সাক্ষাতকারঃ প্রাক প্রাথমিক থেকে সে বিদ্যালয়ে আসা শুরু করেছে। বিদ্যালয়ের নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে নিয়মিত আসে পুষ্পিতা । পাঠে সে অত্যন্ত মনোযোগী । দলীয় কাজে সে অগ্রগামী, বন্ধুদের ও সহযোগিতা করে শ্রেনীতে ।


                        ধাপ-৪ সিদ্ধান্ত গ্রহণঃ
প্রাপ্ত উপাত্তের আলোকে গৃহীত সিদ্ধান্ত সমূহ নিম্নরূপঃ
 একজন শিক্ষার্থীকে মেধাবী ও মনোযোগী হওয়ার জন্য
১।  নিয়মিত প্রতিদিন বিদ্যালয়ে আসতে হবে।
২।  শ্রেণীকক্ষে শিখন শেখানো কার্যক্রমে সক্রিয় থাকতে হবে   
৩। বিদ্যালয়ের নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে ।
৪। বিভিন্ন দলীয় কার্যক্রমে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ  করতে হবে।
৫। শিশুদেরকে সঠিক সময়ে বা বয়সে বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে। 

মন্তব্যঃ
 পেশাগত দক্ষতার মান উন্ন্য়নের জন্য কেসস্টাডি  পরিচালনা অত্যন্ত আবশ্যক প্রতিটি শিশুর মাঝেই অপুরন্ত সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে তেমনই এক সম্ভাবনাময় শিশু পুষ্পিতা চক্রবর্তী অসচ্ছল পরিবারের মেয়ে পুষ্পিতাকে তার মা বাবা সঠিক বয়সে বিদ্যালয়ে ভর্তি করেছেন নিজেদের পরিবারের অভাব থাকলেও মেয়ের পরিচর্যার কোন ঘাটতি রাখেন নি প্রিয়াংকা চক্রবর্তী  সজল চক্রবর্তী একজন বিক্রয় কর্মী । স্টাডি থেকে আমি দেখলাম দরিদ্র হওয়া দোষের কিছু না, সঠিক বয়সে ও নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসলে কোন শিশুই মনযোগী না হয়ে পারে না। তাই একজন শিক্ষক হিসেবে আমাদের করনীয় বিদ্যালয়ের শিশুবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখা এবং নিজ বিদ্যালয়ের শিশুদের যথাসময়ে ভর্তি নিশ্চিত করা।   

No comments: